নিজস্ব প্রতিবেদক: ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা বিদেশ থেকে এসেছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। সারাদেশে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে সিটি করপোরেশন ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়/বিভাগ, দপ্তর/সংস্থার কার্যক্রম পর্যালোচনা-সংক্রান্ত আন্তমন্ত্রণালয় সভায় তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এখানে তো এডিস মশা ছিল না, ডেঙ্গু রোগ ছিল না। এটা তো বাইরে থেকে আসছে। ফ্লাইটে করে প্যাসেঞ্জার আসছিল অথবা দুটি মশা আসছে। দুটি মশা এখানে এসে কোনো না কোনো বাহিত (ডেঙ্গু) ছিল, সে আরও মশা প্রজনন করেছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে বলেই তো অবস্থাটা অন্য দেশের তুলনায় এ রকম ভালো। তাদের দেশেও তো ছিল না। এটা ইউরোপে ছিল। ফ্রান্সে দেখা গেছে যে, একদিনে সাত থেকে আট হাজার লোক মারা গেছে। এ রকম তথ্য আছে আমাদের কাছে।’
আন্তমন্ত্রণালয় সভায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
মশা নিধনে দুই সিটিতে ৩ হাজার লোক নিয়োগ দিয়েছি : স্থানীয় সরকারমন্ত্রী
তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালের আগে আমাদের দেশে ডেঙ্গু রোগের তীব্রতা পরিলক্ষিত হয়নি, যে কারণে এ বিষয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা খুব বেশি ছিল না। সে অভিজ্ঞতা আমরা সংগ্রহ করেছি এবং কী কী খাতে আমাদের কী কী ইন্টারভেনশন দরকার বা কী কী আউটপুট দরকার, সে বিষয়ে কাজ করতে গিয়ে ২০২০ সালে আমরা মোটামুটি সফলতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছিলাম। ২০২১ সালে ২০ হাজারের মতো আক্রান্ত হয়, কিছু মৃত্যু হয়। সেটা আমাদের জন্য স্বস্তিদায়ক ছিল। এখন ২০২২ সাল। এই ২০২২ সালে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগের তীব্রতা আমাদের সমসাময়িক দেশগুলোতে মারাত্মকভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। বাংলাদেশও তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।’
মন্ত্রী বলেন, ‘সাধারণত সেপ্টেম্বরের পর থেকে এর নিম্নগামী আমরা লক্ষ্য করেছি। প্রতিটি দেশে ক্লাইমেট চেঞ্জের কারণে এই রোগের একটা সম্পৃক্ততা আমরা লক্ষ্য করেছি, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এ বছর অক্টোবর মাস শেষ হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এখনও এটা নিম্নগামী অবস্থা না আমাদের কাছে। বাংলাদেশের অবস্থার থেকে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর অনেকের অবস্থা অনেক ভয়াবহ। ভারতে গতকাল পর্যন্ত প্রায় দুই লাখের মতো আক্রান্ত। বিশেষ করে কলকাতায় অসংখ্য এবং মৃত্যুর হার সেখানে বেশি।’
মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে সিটি করপোরেশন ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়/বিভাগ, দপ্তর/সংস্থার কার্যক্রম পর্যালোচনা-সংক্রান্ত আন্তমন্ত্রণালয় সভা।
মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে সিটি করপোরেশন ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়/বিভাগ, দপ্তর/সংস্থার কার্যক্রম পর্যালোচনা-সংক্রান্ত আন্তমন্ত্রণালয় সভা।ছবি : কালবেলা
মশার জন্য কোনো বর্ডার নেই উল্লেখ করে তাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের অবস্থার থেকে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলো অনেকের অবস্থা এর থেকে অনেক ভয়াবহ। ভারতে গতকাল পর্যন্ত প্রায় দুই লাখের মতো আক্রান্ত। বিশেষ করে কলকাতায় অসংখ্য এবং মৃত্যুহার সেখানে বেশি। এশিয়ার সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিইয়া, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন ও ভারতসহ অন্যান্য দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতির সর্বশেষ তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় এসব দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কম বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
বিভিন্ন দেশের পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘১ অক্টোবর পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে ২৮ হাজার ১৯৬ জন আক্রান্ত। আমার মনে হয় এই সংখ্যাটা এখন অনেক বেড়েছে। মালয়েশিয়ায় ৩৭ হাজার ৯৫০ জন। ইন্দোনেশিয়াতে ৯৪ হাজার ৩৫৫ জন। ফিলিপাইনে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৫০ জন। বাংলাদেশে এখনও পর্যন্ত (২৬ অক্টোবর) ৩৩ হাজার ৯২৩ জন। এটা আমাদের কাছে স্বস্তিদায়ক না। অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে যেমন সিঙ্গাপুরে মানুষের সংখ্যা ৫০ লাখের মতো। সেই প্রেক্ষিতে এবং মালয়শিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনের থেকে আমাদের দেশে জনসংখ্যার পরিমাণ বেশি। তা সত্ত্বেও এবং আমাদের জনসংখ্যার ঘনত্ব ভাইরাস ছড়ানোর জন্য বড় কারণ। এটা তো মশাবাহিত ভাইরাস। সে কারণে যদি ওই ফিগার দেখি তাহলে আমাদেরকে সফল বলতে হবে, কিন্তু আমি এটাকে সফল বলব না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের টার্গেট ছিল ২০২০ সালে যে দুই হাজার হয়েছিল, তার থেকে আরও নিচে নামিয়ে আনার। এখানে আমাদের মেয়র সাহেবরা কাজ করেনি অথবা আমরা অনুপস্থিত ছিলাম মনিটরিং করতে বিষয়টি তেমন না। মশা নিধনের জন্য যেসব উপকরণ লাগবে, মশা মারার জন্য যে ওষুধ লাগবে, তা বছরের শুরুতে সংগ্রহ করা হয়। তারপর যে মেশিন লাগবে উনারা (মেয়ররা) সংগ্রহ করেন। তারপর লোকবল লাগবে ৩ হাজার করে। উনাদের লোকবল দেয়া হয়েছে এবং এ জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। দুই কোটি, পাঁচ কোটি করে আমি অর্থ বরাদ্দ দিয়েছি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘মশার ওষুধ আমদানির ক্ষেত্রে এক ধরনের মনোপলি (একচেটিয়াত্ব) ছিল। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা মনোপলি ভেঙেছি। আমাদের যে সমস্ত প্রক্রিয়া হাতে আছে, সেগুলো আমরা করেছি। কিছুদিন আগে অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটি এডিস মশার ওপর একটা স্টাডি করে অবিষ্কার করেছে, একজাতীয় মশা যখন এডিস মশার সঙ্গে ক্রস হবে, তখন এডিস মশার জীবাণু বহন করতে পারবে না। আমরা তাদেরকে ওয়েলকাম করেছি।’
তিনি বলেন, ডেঙ্গুবিরোধী মোবাইল কোর্টের অভিযানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন বিগত ৪ মাসে ১৬৩টি মামলায় ১২ লাখষ ২১ হাজার ৫০০ টাকা ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১৩৯টি মমলায় ৫৭ লাখ ৭৯ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ঢাকা মহানগরীতে বসবাসরত মানুষদের একটি বাসযোগ্য ও দৃষ্টিনন্দন শহর উপহার দিতে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। রাজধানীসহ দেশের মানুষ সুখে-শান্তিতে বসবাস করুক এটাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল লক্ষ্য।
সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিনসহ স্থানীয় সরকার বিভাগ, মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও সিটি কর্পোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
Array