আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ঠিকমতো হিজাব না পরার অভিযোগে ইরানে নীতি পুলিশের হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় এখনো বিক্ষোভ চলছে। তার মৃত্যুর ৪০তম দিনে বিক্ষোভের নতুন মাত্রা পেয়েছে। এই বিক্ষোভ দমনে দেশটির পুলিশ ও প্রশাসন “কঠোর” অবস্থান নিয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিও চলমান বিক্ষোভকে “পশ্চিমা উসকানি” বলে মন্তব্য করে আসছেন।
এবার বিক্ষোভকারীদের কড়া সতর্কবার্তা দিলেন ইরানের প্রভাবশালী বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর কমান্ডার হোসেইন সালামি। তিনি বলেছেন, “শনিবারই (২৯ অক্টোবর) তাদের রাস্তায় নামার শেষ দিন। রাস্তায় আসবেন না! আজই দাঙ্গার শেষ দিন।” এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর ইরানের রাজধানী তেহরান থেকে মাহসা আমিনিকে গ্রেপ্তার করে নীতি পুলিশ। গ্রেপ্তারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পুলিশি হেফাজত থেকে কোমায় নেওয়া হয় এই তরুণীকে। এর তিনদিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
পুলিশি হেফাজতে মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর থেকে হিজাববিরোধী আন্দোলন শুরু করেন দেশটির নারীরা। তাদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও বিক্ষোভ-সমাবেশ হয়েছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য আবির আল-সাহলানি ছাড়াও ইরানি নারীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ফরাসি অভিনেত্রী জুলিয়েট বিনোচি এবং ইসাবেলা হাপার্টও চুল কেটেছেন। ক্রমে এই আন্দোলন গণআন্দোলনের দিকে চলে যায়।
১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর ইরানে নারীদের জন্য হিজাব পরা বাধ্যতামূলক করা হয়। এই বিপ্লবের পর এবারই প্রথম ইরানের হিজাববিরোধী আন্দোলনকারী নারীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সমাবেশ হয়েছে।
ইরানের সংখ্যালঘু কুর্দিদের আবাসস্থল দেশটির পশ্চিমাঞ্চল। মাহসা আমিনিও কুর্দি অধ্যুষিত দেশটির পশ্চিমাঞ্চলের বাসিন্দা। তার মৃত্যুর পর ওই অঞ্চলে প্রথম ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়, যা ধীরে দেশটির অন্যান্য সব শহরে ছড়িয়ে পড়ে। গত ৪২ দিন ধরে দেশটিতে হিজাববিরোধী আন্দোলন চলছে।
স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলেছে, ইরানজুড়ে চলমান হিজাববিরোধী বিক্ষোভে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সহিংসতায় কমপক্ষে ২৫০ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। এছাড়া বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় আরও হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির মৃত্যুদণ্ড চেয়ে স্লোগান দিচ্ছেন। এ সময় দেশটির বাসিজ মিলিশিয়া গোষ্ঠীর সদস্যদের বিরুদ্ধেও স্লোগান দিতে দেখা যায় বিক্ষোভকারীদের। মিলিশিয়া চলমান হিজাববিরোধী বিক্ষোভে ব্যাপক দমন অভিযান পরিচালনা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
Array