ডেস্ক রিপোর্ট:
শীত সমাগত। হিমালয়ের কাছাকাছি অঞ্চলগুলোতে অবশ্য হেমন্তের শুরুতেই শীতের আগমনভাব দেখা গিয়েছে। শীতকাল মানেই ঘরের বাইরে সোয়েটার-জ্যাকেট আর ভেতরে লেপ-কম্বলের দাপট। শীতকাল এলেই ঘরের বিছানার জন্য নতুন লেপ-তোশক বানানোর সমারোহ শুরু হয়। চাহিদা বিবেচনায় ব্যবসায়ীরাও মৌসুমি এ ব্যবসায়ে লাভের সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না।
বাজারে এবং আমাদের ঘরের বিছানার কোণে বিভিন্ন রঙের লেপ দেখা যায়। তবে লেপে দাপট বেশি থাকে লাল রঙেরই। এমনকি, বাজারের লেপ-তোশকের দোকানগুলোও লাল রঙের লেপে ছেয়ে যায়। রোদে শুকাতে দেখা যায় লাল রঙের লেপ।
লেপ তৈরিতে লাল রঙের কাপড় কেন প্রাধান্য পায়? একটু ইতিহাস ঘেঁটে আসা যাক।
ভারতীয় গণমাধ্যম নিউজ ১৮ বলছে, একসময় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদের নিজস্ব শিল্প ছিল লেপ নির্মাণ। তবে এর খ্যাতি ছিল অবিভক্ত বাংলার সর্বত্র।
লেপ তৈরির জন্য লম্বা আঁশের কার্পাস তুলার বীজ ছাড়িয়ে তা চোবানো হতো লাল রঙে। পরে সেগুলো শুকিয়ে মোলায়েম সিল্ক এবং মখমলের মাঝে ভরা হতো। সেই মখমলের রং ছিল লাল। সুগন্ধের জন্যে আতরের ব্যবহারও ছিল বেশ প্রচলিত।
বর্তমানে অবশ্য দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে মখমলের কাপড় ব্যবহৃত হয় না। তবে লাল কাপড় ব্যবহারের প্রথা এখনও চালু আছে। বিশেষ কোনো নিয়ম বা নির্দেশনা না থাকলেও আজকের দিনেও লেপ বানানোর ক্ষেত্রে লাল কাপড়ই বেছে নেন কারিগররা।
বাংলা, বিহার, উড়িষ্যাসহ অভিবক্ত বাংলার প্রথম নবাব মুর্শিদকুলি খাঁর আমল থেকেই লাল মখমলের কাপড় দিয়ে লেপ সেলাই করা হতো। এরপর মুর্শিদকুলি খাঁর মেয়ে জামাতা নবাব সুজাউদ্দিনের আমলে মখমলের পরিবর্তে সিল্কের ব্যবহার শুরু হয়।
রাজধানী ঢাকার লেপ ব্যবসায়ীদের উদ্ধৃতি দিয়ে নিউজ ১৮ জানায়, ঢাকার নবাবদের আমলেও লেপ তৈরির জন্য লাল রঙের কাপড় ব্যবহৃত হতো। তখন থেকে লাল কাপড়ে লেপ বানানোর রীতি চলে আসছে।
এছাড়া, লেপে লাল রঙের কাপড় ব্যবহারের কারণ হিসেবে আরও বলা হয়, লেপ কখনও ধোয়া যায় না। আর লাল কাপড়ে ময়লাও অপেক্ষাকৃত কম চোখে পড়ে।
যদিও এক্ষেত্রে ভিন্ন মত রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, ইতিহাস বা ঐতিহ্যের রীতি না, ব্যবসার খাতিরে ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই লাল কাপড়ে মুড়ে রাখা হয় লেপ। লাল রং দূর থেকেই ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে। অনেকটা দোকানে বিরিয়ানির হাঁড়িতে লাল কাপড় পেঁচিয়ে রাখার মতো। যদিও এই তত্ত্বেরও কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই।
Array