বাংলাদেশের মধ্যে গাজীপুর শিল্পাঞ্চল হওয়ায় প্রতিনিয়তই কোন না কোন ভাবে দূষিত হচ্ছে।গাজীপুরের নদ-নদী দখল দূষন বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনার দাবিতে জেলা প্রশাসক কে স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের গাজীপুর জেলা কমিটি।
গতকাল মঙ্গলবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল গাজীপুরের পক্ষ থেকে জেলা কমিটির সভাপতি এজি কায়কোবাদ ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান স্বাক্ষরিত স্মারকলিপি জেলা প্রশাসক এর পক্ষ থেকে গ্রহণ করেন সহকারী কমিশনার জনাব আলামিন হালদার।
সংগঠনটির পক্ষে এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন জীববৈচিত্র বিষয়ক সম্পাদক আশিকুর রহমান, আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট বিপাশা আফরিন ও তথ্য প্রযুক্তি ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ওয়ালীউল্লাহ সাকিব। স্মারকলিপিতে বলা হয়, আমরা বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল গাজীপুর জেলা কমিটি ও গাজীপুরের নাগরিক। আপনি জ্ঞাত আছেন যে, ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সংশ্লেষে কালোত্তীর্ণ মহিমায় আর বর্ণিল দীপ্তিতে ভাস্বর অপার সম্ভাবনায় ভরপুর গাজীপুর জেলা।
“সবুজে শিল্পে ভরপুর, ঐতিহ্যের গাজীপুর” এই ট্যাগলাইনটি গাজীপুর জেলার ইতিহাস-ঐতিহ্য, প্রাকৃতিক নিসর্গ এবং অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক সম্ভাবনাকে ধারণ করে। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, গাজীপুরে দখল-দূষণের কবলে অধিকাংশ নদী-খাল। গাজীপুরে দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশ ও নদী দূষণ করে যাচ্ছে তরল বর্জ্য পরিশোধনাগারবিহীন (ইটিপি) কল-কারখানাগুলো। আবার এমন অনেক কারখানা রয়েছে যেগুলোর ইটিপি আছে, কিন্তু খরচ বাঁচাতে তা ব্যবহার করা হচ্ছে না। এসব কারখানার দূষিত পানি ইটিপির বাইরে বাইপাস করে নদী ও খালসহ বিভিন্ন জলাশয়ে ফেলা হচ্ছে। কারখানাগুলোর এই দূষিত পানি জলজ জীববৈচিতর্্েযর ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে।
স্মারকলিপিতে আরো উল্লেখ করা হয়, নগরীর কোনাবাড়ি, কাশিমপুর,ইসলামপুর ও টঙ্গী এলাকায় তুরাগ নদের তীরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ডায়িং কারখানাসহ নানা ধরনের ছোট-বড় কয়েকশ কারখানা। এসব কারখানার মধ্যে কিছু বড় কারখানায় পানি বিশুদ্ধ করার জন্য ইটিপি থাকলেও অধিকাংশ কারখানায় ইটিপি ব্যবহার করা হয় নাবলে বিলের পানি কালো বর্ণ ধারণ করে আছে। পানি চলমান না থাকায় দূষিত পানি খালে পড়ে তা আর সরতে পরছে না। একই অবস্থা জেলা শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া চিলাই নদীরও। দখল আর দূষণে অস্তিত্ব হারাচ্ছে। কারখানার বর্জ্য এবং শহরের ময়লা-আবর্জনা নদীর পানিতে মিশে তা দূষিত করে তুলছে।
শ্রীপুরের লবলং সাগর বর্তমানে লবলং খাল তবুও মৃত, এক সময়ে সারাদেশে ব্যাপক পরিচিত লবলং সাগর এখন দখল-দুষণে বিলীন হবার পথে! খালের বিভিন্ন অংশ পরিদর্শন করে দেখা যায় খালের পুরো অংশই গিলে ফেলেছে শিল্প প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন ভাবে দখল করে নালা বানিয়ে আবার সেই নালায় ছেড়ে দেয়া হচ্ছে বিষাক্ত তরল বর্জ্য। আর এভাবেই প্রতিনিয়ত দখল আর দূষণে অস্তিত্ব হারাচ্ছে গাজীপুরের নদনদী। এ অবস্থা উত্তরণে আপনার সদয় হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক সংলগ্ন বাইমাইল এলাকায় গড়ে উঠেছে বিশাল আকারের উন্মুক্ত আবর্জনার স্তূপ। কুকুর-বিড়াল ও নানা পশুপাখি ময়লা নিয়ে টানাহেঁচড়া করছে। দুর্গন্ধে বিষিয়ে উঠছে পরিবেশ। ওই মহাসড়কে চলাচলকারী হাজার হাজার যানবাহনের যাত্রী ও পথচারীদের নাকে কাপড় গুঁজে চলতে হয়। স্কুল কলেজ পড়ুয়া শত শত ছাত্র-ছাত্রীকে ঐ এলাকা দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করতে হয়। উন্মুক্ত স্থানে প্রদর্শিত এই ময়লা আবর্জনার পাহাড় অপসারণ এবং স্থায়ী ডাম্পিংয়ের ব্যবস্থা করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার স্থায়ী সমাধান করা উচিত। এতে করে জীব বৈচিত্র, ইকোলজিক্যাল সিস্টেম, বায়োলজিক্যাল ব্যলেন্স, বাস্তুসংস্থান সবই প্রায় হুমকির মুখে পড়ছে। কৃষিজ পণ্যে ঢুকে যাচ্ছে ভারী ধাতুর মত মারাত্বক ক্ষতিকর পদার্থ যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য চরম ক্ষতিকর।
এ পর্যায়ে প্রশাসনিক দ্রুত ও সঠিক পদক্ষেপ ছাড়া এ বিষয়টি সমাধানে যাওয়া খুবই দুস্কর হয়ে পড়েছে। জনস্বাস্থ্য, ভুগর্ভস্থ পানির নিরাপত্তা, কৃষিজ জমি ও সম্পদের নিরাপত্তা এবং নদনদী ও খালের বহমানতা রক্ষায় , গতিপথ সচল রাখতে আপনার সদয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বিনীত আবেদন রাখছি। বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল-গাজীপুর শাখার সভাপতি এজি কায়কোবাদ বলেন, আমরা আশা করি গাজীপুরের নদী দূষণ ও পরিবেশ রক্ষার জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
Array