নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশে গত জুন থেকে আগস্ট মাসে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা নতুন করে বাড়েনি।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশে ৫৭ লাখ ব্রডব্যান্ড গ্রাহক ছিল। তবে একই বছরের ডিসেম্বরে এর সংখ্যা বেড়ে ১ কোটি হয়েছিল। মহামারির ওই সময়ে কাজ, যোগাযোগ, পড়াশোনার পাশাপাশি বিনোদনের জন্য ইন্টারনেটের উপর নির্ভর করায় এই সংখ্যা বেড়েছিল।
তবে ২০২২ সালে সেই বৃদ্ধির হার কমে এসেছে।
চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত তিন মাসের মধ্যে ব্রডব্যান্ড সংযোগের সংখ্যা ১১.১ মিলিয়নে অপরিবর্তিত রয়েছে।
অর্থাৎ ইন্টারনেট সংযোগের ক্রমবর্ধমান চাহিদা যা লকডাউনের কারণে শীর্ষে পৌঁছেছিল, সেটিই এখন স্থির রয়েছে।
ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগের পরিমাণ কমে আসার কারণ জানতে চাইলে বেসিসের প্রাক্তন সভাপতি এবং বিএমসিসিআই-এর বর্তমান সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, স্থানীয়ভাবে আমাদের স্পষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নেই। সরকারি সেবার অনলাইন ডেলিভারি এখনও খুব সীমিত। সবকিছু আগের পদ্ধতিই রয়েছে। ওটিটি এতে কিছুটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখলেও অন্যান্য ক্ষেত্রে সেটি নেই। এছাড়া ব্রডব্যান্ড সংযোগের খরচও অনেক বেশি।
“অন্যদিকে ‘এনটিটিএনএস’ সম্প্রতি অপারেটিং খরচ কমানোর জন্য সারাদেশে তাদের অনেক পিওপিএস বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের নাগাল আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। এটি ডিজিটাল কমার্স ও আইটি ফ্রিল্যান্সিংয়ের বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করবে।”
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি মো. এমদাদুল হকের মতে, “গত আড়াই বছরে অনেকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হওয়ায় অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে নতুন সংযোগের চাহিদা প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে।”
হক বলেন, “ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মানুষ ইন্টারনেটে কম খরচ করতে বাধ্য হয়েছে।”
দেশের অভ্যন্তরে মূল্যস্ফীতি আগস্টে গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯.৫%-এ পৌঁছে সেপ্টেম্বরে মাত্র ৯.১%-এ নেমে আসে।
আইএসপিএবি সভাপতির মতে, গ্রামীণ এলাকায় গ্রাহকদের কাছে ব্রডব্যান্ড সংযোগের চাহিদা থাকলেও ট্রান্সমিশন লাইনের অভাবে আইএসপিগুলি সেটিকে কাজে লাগাতে পারেনি।
ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) পরিষেবা দিতে অক্ষমতার কথা উল্লেখ করে বলেন, যারা অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ের নামে দেশীয় পাইকারি আউটলেটে আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইথ পরিবহন করে তাদের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা বলছে, আইএসপিগুলি তাদের পরিষেবাগুলি প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রসারিত করতে অক্ষম।
তবে আইএসপিএবি সভাপতির দাবিকে খণ্ডন করে বেশ কয়েকটি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ প্রতিষ্ঠান দাবি করে, এনটিটিএন দেশের প্রায় প্রতিটি কোণায় রয়েছে, বেশিরভাগ ইউনিয়নেই সংযোগ রয়েছে।
ফাইবার হোম নামে একটি ইন্টারনেট সংযোগ প্রতিষ্ঠানের টেকনোলজি কর্মকর্তা সুমন আহমেদ সাবির প্রশ্ন করে বলেন, “আইএসপিগুলো তাদের দূরের গ্রহীতাদের কীভাবে যুক্ত করছে? কিছু প্রতিষ্ঠানের হয়তো সক্ষমতা নেই। তবে এটাকে সবার অবস্থা বলে মনে করার সুযোগ নেই।”
ইন্টারনেট সংযোগ প্রতিষ্ঠানগুলো ভয়েস, ইন্টারনেট ও ডেটা পরিষেবা প্রদানকারীদের কাছে ফাইবার অপটিক কেবলের ক্ষমতা ভাড়া দেয়।
বর্তমানে দেশে ছয়টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স রয়েছে।
ফাইবার@হোম লিমিটেড ও সামিট কমিউনিকেশনস নামে দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ২০০৯ সালে লাইসেন্স পায়। তারা ৫০,০০০ কিলোমিটার তার দিয়ে বাজারে আধিপত্য বিস্তার করেছিল।
২০১২ সালে লাইসেন্স পেলেও সরকারি তিন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অফ বাংলাদেশ, এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে সেভাবে দৃশ্যমান নয়।
২০০৯ সালে ষষ্ঠ অপারেটর হিসেবে লাইসেন্স পায়বাহন। এটির নেটওয়ার্ক স্থাপন প্রাথমিক পর্যায়ে শেষ হয়েছে।
আইএসপিএবি অনুসারে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা গ্রাহক বৃদ্ধিতে বাধা থাকা সত্ত্বেও আইসিটি বিভাগের ডিজিটাল সংযোগ প্রকল্পের প্রচেষ্টার কারণে নতুন ২,০০,০০০ সংযোগ হবে। এগুলোর সহায়ক অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য অনুযায়ী, আগস্টে মোট ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ১২৭.২ মিলিয়ন। যা এক মাস আগে ১২৭.৫ মিলিয়ন ছিল।
আসল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা অবশ্য বিটিআরসি ডেটার তুলনায় অনেক কম কারণ অনেকেই একাধিক সিম ব্যবহার করেন।
অন্যদিকে আগস্টে মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ৩,০০,০০০ কমে ১১৬.১ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে।
সরকারের নতুন জনসংখ্যা শুমারি অনুযায়ী, দেশের প্রায় ৬৫ মিলিয়ন মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে না।
Array