রাবি প্রতিনিধি:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় তার “চিকিৎসায় অবহেলা”র অভিযোগ তুলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভাঙচুর করেছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে হাসপাতালের ভেতরে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন তারা। এসময় শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
বুধবার (১৯ অক্টোবর) রাত ৯টার দিকে হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়।
নিহত শাহরিয়ার মার্কেটিং বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী এবং দিনাজপুরের বিরলের বাসিন্দা। তিনি ওই হলের ৩৫৪ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন।
হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, রাত ৮টার দিকে নিচে কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ পান তারা। এরপর ঘটনাস্থলে গিয়ে শাহরিয়ারকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. আসাবুক হক। তিনি বলেন, “যতটুকু জেনেছি, নিহত শিক্ষার্থী হলের তৃতীয় তলার রেলিংয়ে বসে ছিলেন। একপর্যায়ে অন্যমনস্ক হয়ে নিচে কংক্রিটের ঢালাইয়ের ওপর পড়ে যান। এতে তার নাক-মুখ দিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হলেও তাকে বাঁচানো যায়নি।”
হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, “ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। তবে এটি হত্যা, আত্মহত্যা নাকি দুর্ঘটনা আমরা এখনো নিশ্চিত না। সিসিটিভির ফুটেজ দেখার পরে বিষয়টি জানতে পারবো।”
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, গুরুতর অবস্থায় শাহরিয়ারকে হাসপাতালে নেওয়া হলে দায়িত্বরতরা তাদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্যের স্বাক্ষরসহ বিভিন্ন কাগজপত্র চেয়ে বসেন। এছাড়া তাৎক্ষণিক চিকিৎসা শুরু না করে বিভিন্ন নিয়ম মানতে বাধ্য করা হয়। এতে করে কালক্ষেপণ হওয়ায় ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা ৮ নম্বর ওয়ার্ডে দায়িত্বরতদের পরিচয় প্রকাশ এবং তদন্তের নামে তালবাহানা না করে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, “আহত অবস্থায় শাহরিয়ারকে নিয়ে আসা হলে জরুরী বিভাগের চিকিৎসক অনেক দেরিতে আসেন। তাদের বারবার তাগাদা দিলেও কেউ আসেনি। তাই বাধ্য হয়ে তাদের সঙ্গে প্রথমে কথাকাটাকাটি এরপর হাতাহাতি শুরু হয়। হাসপাতালের দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা এক পর্যায়ে আমাদের ওপর চড়াও হোন।”
ঘটনাস্থলে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, “শাহরিয়ার ভাইকে সোয়া ৮টার দিকে মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু রাত সোয়া ৯টায় পর্যন্ত তার কোনো চিকিৎসা শুরু হয়নি। কোনো ডাক্তার নাই। একজন ইন্টার্নি ডাক্তার আছেন। এর প্রতিবাদ করাতে আনসার সদস্যরা আমাদের ওপর হামলা চালায়।”
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রফিকুল আলম জানান, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনা শুনে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। মেডিকেল গুরুত্বপূর্ণ এলাকা তাই নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চলছে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার শামীম ইয়াজদানিকে বেশ কয়েকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তাই তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
Array