কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:
কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ায় মরমী সাধক ফকির লালন সাঁইয়ের ১৩২তম তিরোধান দিবসের তিন দিনের “লালন উৎসব” শেষ হচ্ছে আজ, বুধবার (১৯ অক্টোবর)। সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এবং লালন একাডেমির আয়োজনে প্রতিবারের মতো এবারও ফকির লালন সাঁইজির দর্শন নিয়ে আলোচনা সভা ও লালনের গান পরিবেশন করা হয়েছে।
উৎসবকে ঘিরে ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে বসেছিল বাউল সাধুদের মিলন মেলা। এতে যোগ দেন দেশ-বিদেশের অসংখ্য ভক্ত ও অনুরাগীরা। পহেলা কার্তিক সোমবার বিকেলে অধিবাসের মধ্যদিয়ে সাধুসঙ্গ শুরু হয় এবং পরদিন মঙ্গলবার অপরাহ্নে পূণ্যসেবার মধ্যদিয়ে তা শেষ হয়।
বুধবার বিদায়বেলায় সাধুদের মাঝে বেজে ওঠে বিরহের সুর। মন না চাইলেও সাঁইজির ধাম ত্যাগ করতে হবে। আবার সাধুদের চরণধুলি পড়বে এবং ভাবের মিলন ঘটবে দোল পূর্ণিমা উৎসবে।
বছরে দুটি উৎসবে বাউল সাধুদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ি। দোল উৎসব আনন্দ উল্লাসে পালিত হলেও তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠান অনেকটা আবেগঘন পরিবেশে পালিত হয়।
গত দুই বছর মহামারির কারণে কোনো অনুষ্ঠান হয়নি। এ বছর তিরোধান দিবসে সাঁইজির ধামে আসতে পেরে সাধু ও ভক্তরা খুশি হলেও বিদায় বেলায় সাধুদের চোখে মুখে যেন বেদনার ছাপ। কী পেলেন আর কী পেলেন না, তা তাদের আত্মসাধনার ফল। যে ফল অন্তরে ধারণ করে সাইজির কৃপা দর্শন নিয়ে নিজ নিজ ধামে ফিরে চলা। আবারও সাঁইজির দোল উৎসবে ঘটবে মিলন। যে মিলনের মাধ্যমে হবে “স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ”।
দাউদ আলী শাহ বলেন, “আমরা যদি ফকির লালন শাহের দর্শন অনুসরণ করি তাহলে সমাজ থেকে মারামারি-হানাহানি, অন্যায় অত্যাচার দূর হয়ে শান্তি বিরাজ করবে। যা জগতের সব প্রাণীর জন্যই মঙ্গলকর।”
আখড়া বাড়িতে অনুষ্ঠিত তিরোধান দিবসের তিনদিনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে উৎসবকে কেন্দ্র করে জমজমাট আখড়াবাড়ি আবার বছরজুড়ে রয়ে যাবে আপন রূপে। ফকির আমিরুল শাহ বলেন, “সাধুদের সব কিছুর মূলে গুরুভক্তি। গুরুকে ভজেই সর্বদা তারা পরমাত্মার সন্ধান করে ফেরে। সেই গুরুকে বারবার প্রণাম ও ভক্তি জানিয়ে শিষ্যরা বিদায় নিলেও আবারও তারা ঘুরে ঘুরে আসেন গুরুর এই তীর্থধামে।”
এনাম শাহ বলেন, “সাঁইজি তার পদাবলি ও বাণীতে মানুষকে প্রকৃত শুদ্ধ মানুষ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তাই এই উৎসব কেবল উৎসব নয়, এখান থেকে লালনের এমন শিক্ষা ও মানবপ্রেম ছড়িয়ে দেওয়ার আয়োজন হয়।”
বুধবারের সমাপনী অনুষ্ঠানের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী। কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অন্যান্য অতিথিরা আলোচনায় অংশ নেবেন।
উল্লেখ্য, ১২৯৭ বঙ্গাব্দের পহেলা কার্তিক আধ্যাতিক সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহর দেহত্যাগের পর তার ভক্ত ও অনুসারীরা আখড়াবাড়িতে নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে দিবসটি পালন করে আসছেন।
Array