মো. খসরু চৌধুরী সিআইপি:
শেখ রাসেল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র। ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর ঢাকায় ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবনে জন্ম গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর প্রিয় লেখক খ্যাতিমান দার্শনিক ও নোবেল বিজয়ী ব্যক্তিত্ব বার্ট্রান্ড রাসেলের নামানুসারে পরিবারের নতুন সদস্যের নাম রাখেন ‘রাসেল’।
শেখ রাসেলের ভুবন ছিল তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মাতা বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং ভাই শেখ কামাল ও শেখ জামালকে ঘিরে।
১৯৭১ সালে রাসেল তাঁর মা ও দুই আপাসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ধানমণ্ডি ১৮ নম্বর সড়কের একটি বাড়িতে বন্দি জীবন কাটিয়েছেন। পিতা বঙ্গবন্ধু তখন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি এবং বড় দুই ভাই শেখ কামাল ও শেখ জামাল চলে গেছেন মুক্তিযুদ্ধে। মা ও আপাসহ পরিবারের সদস্যরা ১৯৭১ সালের ১৭ই ডিসেম্বর মুক্ত হন। রাসেল ‘জয় বাংলা’ বলে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। বাইরে তখন চলছে বিজয়-উৎসব।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে দেশি-বিদেশি চক্রান্তে পরিবারের সদস্যদের সাথে শেখ রাসেলকেও হত্যা করা হয়। তখন রাসেল ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র।
জন্মদিনে শেখ রাসেলকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলা ভাষাভাষী মানুষ থাকবে, ততদিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাথে শেখ রাসেলও বেঁচে থাকবে বাঙালীর হৃদয়ে। পাষণ্ড বুলেট হয়তো জানেনা যে- মানুষের ভালবাসায় যুগ যুগ যারা বেঁচে থাকে, মৃত্যু তাদেরকে স্পর্শ করতে পারে না।
শেখ রাসেল বেঁচে থাকলে বঙ্গবন্ধুর মতই বাঙালী জাতির ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতেন, বিশ্বের শোষিত মানুষের নেতা হতেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মম ভাবে হত্যা করার পর শিশু রাসেল কেও হত্যা করলো ঘাতকরা। কেন রাসেল কে হত্যা করা হলো? সেদিন রাতে বঙ্গবন্ধুর রক্ত চিরতর ধরনী থেকে মুছে ফেলতে রাসেলকে হত্যা করা হয়েছিল। কারণ খুনিরা জানতো, বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরসূরিরা একদিন লাল সবুজের পতাকা হাতে নিয়ে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী অশুভ শক্তি বাংলাদেশ থেকে নিশ্চিহ্ন করবে। যার জ্বলন্ত উদাহরণ বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরসূরি তার সুযোগ্যা কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের সময় বিদেশে থাকার কারণে প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মাত্র ১১ বছরের কচি বয়সে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে ঘাতকদের হাতে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় শেখ রাসেল। মা, বাবা, দুই ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী, চাচার লাশের পাশ দিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে সবার পর সবশেষে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয় শেখ রাসেলকে। তার আগে সে বারবার বলেছিল, ‘মায়ের কাছে যাব’। তৃষ্ণার্ত হয়ে পানি খেতেও চেয়েছিল। মায়ের কাছে নেওয়ার নাম করেই হত্যা করা হয় শিশু রাসেলকে।পৃথিবীতে যুগে যুগে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে কিন্তু শিশু রাসেলের মতো এমন নির্মম, নিষ্ঠুর এবং পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড কোথাও ঘটেনি।
বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিরা তাকে হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় তাদের সেই অপচেষ্টা শতভাগ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। শহীদ শেখ রাসেল আজ বাংলাদেশের শিশু-কিশোর, তরুণ, শুভবুদ্ধিবোধ সম্পন্ন মানুষদের কাছে ভালবাসার নাম।
অবহেলিত, পশ্চাৎপদ, অধিকার বঞ্চিত শিশুদের আলোকিত জীবন গড়ার প্রতীক হয়ে গ্রাম-গঞ্জ-শহর তথা বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ জনপদ-লোকালয়ে শেখ রাসেল আজ এক মানবিক সত্তায় পরিণত হয়েছেন। মানবিক চেতনা সম্পন্ন সকল মানুষ শেখ রাসেলের মর্মান্তিক বিয়োগ বেদনাকে হৃদয়ে ধারণ করে বাংলার প্রতিটি শিশু-কিশোর তরুণের মুখে হাসি ফোঁটাতে আজ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বঙ্গবন্ধু ও তার শিশুপুত্র শেখ রাসেলের দণ্ডপ্রাপ্ত খুনিরা এখনও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পলাতক আছে। সেই সকল দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করা আজ সময়ের দাবি।
শেখ রাসেল আজ বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের কাছে একটি আদর্শ ও ভালোবাসার নাম। শেখ রাসেলের মৃত্যু নাই, তিনি বেঁচে আছেন কোটি কোটি বাঙালির হৃদয়ে। শুভ জন্মদিন শেখ রাসেল।
লেখক: রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তা, পরিচালক, বিজিএমইএ; শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ; চেয়ারম্যান, নিপা গ্রুপ ও কেসি ফাউন্ডেশন।
Array