অনলাইন ডেস্ক:
একটা দেশ ও জাতির শক্তিশালী সম্পদ হচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। আজকের তরুণরাই আগামী দিনের আশার আলো। তারা পরিচালনা করবে আগামীর সমাজ, রাষ্ট্র ও জাতিকে। তরুণদের ওপর ভিত্তি করে একটি রাষ্ট্র প্রগতির দিকে এগিয়ে যাবে। তাদের প্রেমময় রূপ ও শক্তির কারণে দরিদ্র, নিঃসহায় প্রবঞ্চিত ও নিগৃহীত জনতা লাভ করবে নতুন জীবন। প্রদীপ্ত হবে নবোদ্দীপনায়। কিন্তু তরুণ প্রজন্ম আজ নৈতিক অবক্ষয়ের সাগরে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। তা দিন দিন মহামারিতে রূপ নিচ্ছে।
তরুণদের বড় অংশ অনৈতিকতার করাল গ্রাসে নিমগ্ন। তাদের অবক্ষয়ের কারণে জাতি হতাশায় নিমজ্জিত। তারা গোটা সমাজকে ঠেলে দিচ্ছে অনিশ্চিত অন্ধকারের দিকে। জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকাণ্ডে। তাদের মধ্যে বাড়ছে মাদকাসক্তি, স্মার্টফোন আসক্তি, অপরাজনীতি, বিকৃত যৌনাচার, অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি, শিক্ষাঙ্গনে নৈরাজ্য সৃষ্টিসহ নানা ধরনের সহিংস ও নৃশংস কর্মকাণ্ড। শৃঙ্খলাহীন এক অনিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে তারা। তরুণদের মধ্যে যেসব নৈতিক অবক্ষয় অনুপ্রবেশ করেছে, তার মূলে রয়েছে নৈতিক শিক্ষার অভাব, মাদকের বিস্তার, অপসংস্কৃতির প্রসার, বেকারত্ব বৃদ্ধি, পরিবারের উদাসনীতা।
সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, ২০১৯ সালে ২ হাজার ৪১১টি যুব সহিংস ঘটনা, ২০২০ সালে ২ হাজার ৩৬৩টি ঘটনা এবং ২০২১ সালে ১ হাজার ৮৯৬টি সহিংস ঘটনা ঘটেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে আশঙ্কাজনকভাবে যুব সহিংসতা বাড়ছে। সহিংসতা ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত কখনো কমেছে এবং কখনো বেড়েছে। তবে তা কখনোই ১ হাজার ৫০০ ছাড়ায়নি। বিগত মাত্র তিন বছরেই দেশে অন্তত ৪ হাজার কিশোর-কিশোরীকে হিংসাত্মক ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়।
আঁতকে উঠার মতো বিষয় হলো, ঢাকাতেই সক্রিয় রয়েছে প্রায় ৭০টি কিশোর গ্যাং। আধিপত্য বিস্তারে তারা এই গ্যাং গড়ে তুলছে। রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ও একের পর এক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাচ্ছে তারা। এভাবে শিক্ষিত ও দক্ষ যুবকরাও অপরাধ ও সহিংসতার জীবনের দিকে ঝুঁকছেন। তারা অনেকটা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ছুটছে অন্ধকার গন্তব্যের দিকে।
তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, যৌননিপীড়নের ঘটনায় তরুণদের সম্পৃক্ততা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এছাড়া প্রতিনিয়তই বাড়ছে তরুণদের অপরাধপ্রবণতা। উন্নত দেশগুলোতে অপরাধচিত্র ঘটে, তবে তা কার্যকর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করার ফলে কমতে থাকে। আমাদের দেশে এটা অনেকটা কম হওয়ার কারণে ক্রমেই বাড়ছে অপরাধপ্রবণতা। প্রকৃত নৈতিক শিক্ষার অভাবের কারণে বর্তমানে লাগামহীন তারুণ্য।
তরুণদের গড়ে তুলতে ঢেলে সাজাতে হবে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। বহু ধারার শিক্ষাকে একমুখী শিক্ষায় এনে কিশোর বয়স থেকেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিজ্ঞানে আগামী প্রজন্মকে গড়ে তুলতে হবে। মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও সহযোগিতায় তরুণ প্রজন্মকে নিরাপদ গন্তব্যে পরিচালিত করা সম্ভব। পারিবারিক ও সামাজিকভাবে নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। তরুণদের কথা মাথায় রেখে সরকারের বহুমুখী উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে হবে। সর্বোপরি, ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের কথা মাথায় রেখে কাজে লাগাতে হবে দেশের আপামর তরুণ-যুব সমাজকে।
- লেখক :শিক্ষার্থী, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, গাজীপুর