• আজকের পত্রিকা
  • ই-পেপার
  • আর্কাইভ
  • কনভার্টার
  • অ্যাপস
  • নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধ কি আদৌ দরকার? 

     বার্তা কক্ষ 
    07th Oct 2022 10:07 am  |  অনলাইন সংস্করণ

    গ্রেগরি এ ড্যাডিস:
    গত ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে জড়ো হওয়া বিশ্বনেতাদের সামনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষণা করেছিলেন, ‘আমরা নতুন করে আর কোনো স্নায়ুযুদ্ধ চাই না।’ তিনি বলেছিলেন, ‘আমেরিকা বলছে না যে কোনো জাতিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্য অংশীদারের মধ্যে যে কোনো একটিকে বেছে নিতে হবে।

    তবে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বলতে হয়, নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হওয়ার সম্ভাবনাকে সবাই যেভাবে দেখছেন বাস্তবতা সম্ভবত তার বিপরীত। বাইডেনের জোরালো যুক্তি উত্থাপন সত্ত্বেও বিদেশি নীতি পর্যবেক্ষকেরা একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অন্যদিকে রাশিয়া ও চীনের মধ্যে ক্রমবর্ধমানভাবে বাঁক নেওয়া সম্পর্ককে ‘স্নায়ুযুদ্ধ’ হিসেবে অভিহিত করছেন। এই নতুন শীতল যুদ্ধের বিশ্বে বিভিন্ন দেশ কিংবা জাতি বাস্তবিক অর্থে কোনো একটি পক্ষ বেছে নেবে কিংবা নিতে বাধ্য হবে বলেই মনে করা হয়। স্নায়ুযুদ্ধের সম্ভাবনার পক্ষে আরেকটি যুক্তি হলো, গত মার্চ মাসে পরিচালিত এক জরিপে উঠে আসে—প্রাপ্তবয়স্ক প্রতি ১০ জনের মধ্যে ছয় জনের বেশি আমেরিকান মনে করেন, বিগত পাঁচ বছর আগের তুলনায় এখন স্নায়ুযুদ্ধের সম্ভাবনা নিশ্চিতভাবে বেশি।

    স্পষ্ট করে বলতে গেলে, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ব্যক্তিগত আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু স্নায়ুযুদ্ধের ইতিহাসবিদ হিসেবে আমার প্রশ্ন হলো, ‘ঠান্ডা যুদ্ধে প্রত্যাবর্তন নয়’—বাইডেনের এমন অবস্থান ওয়াশিংটনের প্রতিষ্ঠিত বৈদেশিক নীতির সম্পূর্ণ প্রতিনিধিত্ব করে কি না। এই প্রশ্ন করাকে আমি বৈধ বলে মনে করি এজন্য যে, স্নায়ুযুদ্ধ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামনে সুবিধা এবং সুযোগ—দুই-ই মেলে ধরেছে। তবে, আমি এ-ও বিশ্বাস করি, আমেরিকানরা যদি বাস্তবিক অর্থেই এ বিষয়ে যথেষ্ট আন্তরিক ও সত্ হয়, তাহলে অনেকেই স্বীকার করবেন যে, তারা আসলেই একটি নতুন স্নায়ুযুদ্ধের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছেন।

    ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি থেকে ১৯৮৯ সালে বার্লিন প্রাচীরের পতন পর্যন্ত সময়ে চলমান স্নায়ুযুদ্ধ আপাতদৃষ্টিতে মার্কিন প্রশাসন ও বৃহত্তর মার্কিন জনসাধারণের জন্য ক্রমাগতভাবে যে সুবিধা এনে দিয়েছিল, তা অনেকটা অদৃশ্য হয়ে গেছে। এই দাবির পক্ষে সম্ভবত সবচেয়ে উপযুক্ত উদাহরণ হতে পারে—স্নায়ুযুদ্ধের যুগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার হস্তক্ষেপবাদী বৈদেশিক নীতির ন্যায্যতা প্রমাণ করতে পেরেছিল। যেমন—গ্রীস থেকে কঙ্গো পর্যন্ত নিজেকে একটি হিতৈষী পরাশক্তি হিসেবে উপস্থাপন করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যা একটি সম্প্রসারণবাদী কমিউনিস্ট হুমকির বিরুদ্ধে নতুন গণতন্ত্রকে সহায়তা করেছে। এই দাবি যথেষ্ট বাস্তবসম্মত।

    মার্কিন সমর্থনকারী মিত্ররা, দক্ষিণ কোরিয়া কিংবা দক্ষিণ ভিয়েতনাম, স্নায়ুযুদ্ধের গুরুত্ব পরিষ্কার বুঝতে পেরেছিল যখন, প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যানের ভাষায়, ‘স্বাধীন দেশগুলোকে কবজা করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের পরিবর্তে মস্কো এমন সব কাজ করেছিল, যা সংঘাত-উত্তেজনাকে উসকে দেয় এবং সশস্ত্র আক্রমণ ও যুদ্ধ শুরু করে।’ এমনকি প্রক্সি যুদ্ধ, যেখানে পরাশক্তিগুলো স্থানীয় মিত্রদের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে লড়াই করে, যখন একজনের শত্রুকে কোনো একটা আদর্শিক বৈশ্বিক হুমকি হিসেবে গণ্য করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে, স্নায়ুযুদ্ধকালে তখন অনেক সহজ ছিল।

    সত্যিকার অর্থে, স্নায়ুযুদ্ধ তার চ্যাম্পিয়নদের জন্য এমন একধরনের সাংস্কৃতিক পুঁজির প্রস্তাব দিয়েছিল, যাকে কাজে লাগিয়ে মার্কিনিরা নিজেদের একটি গুণপূর্ণ জাতীয় পরিচয় গ্রহণ করার সুযোগ পায়। শীতল যুদ্ধের সময়কালে যুক্তরাষ্ট্র এমন নীতির প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম হয়, যা ঈশ্বরহীন কমিউনিজমের কুফলের ঠিক বিপরীত ছিল। স্নায়ুযুদ্ধের এই কাঠামোতে মার্কিনরা সর্বজনীন গণতান্ত্রিক নীতির নৈতিক রক্ষকে পরিণত হয়ে ওঠে। বিপরীতভাবে কমিউনিস্টরা হয়ে ওঠে নৈতিক মতবাদের বিরোধী। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৪৭ সালে জনপ্রিয় কমিক ‘ইজ দিস টুমরো’তে শিশুদের শেখানো হয়েছিল যে, কমিউনিস্টদের ক্ষমতার উত্থান ‘অনাহার, হত্যা, দাসত্ব এবং বলপ্রয়োগের ওপর নির্ভর করে।’

    এ ধরনের হুমকি মোকাবিলার পরিপ্রেক্ষিতে কংগ্রেসনাল-সামরিক-শিল্প কমপ্লেক্সে কাজ করা ব্যক্তিরা প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির প্রশ্নে সরল, জনপ্রিয় যুক্তি দাঁড় করানোর সুযোগ পান। ফলশ্রুতিতে মাত্র এক বছরের ব্যবধানেই—১৯৪৮ থেকে ১৯৪৯—প্রতিরক্ষা বরাদ্দ ২০ শতাংশ বৃদ্ধি করে কংগ্রেস।

    বার্লিন সংকট, চীনের গৃহযুদ্ধে কমিউনিস্ট বিজয়, সফল সোভিয়েত পারমাণবিক পরীক্ষা এবং ১৯৪৯ সালে ন্যাটো গঠন এমন একটি ভবিষ্যতের চিত্র সামনে আনে, যেখানে মার্কিনরা নিজেদের নিরাপত্তা ও স্বার্থ রক্ষার জন্য একটি শক্তিশালী সামরিক ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা ব্যাপকভাবে অনুভব করে। এক্ষেত্রে বলতে হয়, অবশ্যই মার্কিন সেনাবাহিনী বৃদ্ধির উদ্দেশ্য ছিল বৈশ্বিক মঞ্চে শক্তি বাড়ানো।

    নব্বইয়ের দশকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল যে, ঠান্ডা যুদ্ধ অনিচ্ছাকৃত পরিণতির জন্য দায়ী। স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্বে আপাতদৃষ্টিতে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতাই শুধুু ভেঙে পড়েনি, এর অভাবে মার্কিন নাগরিকদের পেয়ে বসেছিল একীভূত শত্রু। রাজনীতিবিজ্ঞানী জন জে মেয়ারশাইমার ১৯৯০ সালে ঠান্ডা যুদ্ধের শেষের দিকে যুক্তি দিয়ে বলেছিলেন, ‘ইউরোপ এমন একটি রাষ্ট্রব্যবস্থায় ফিরে যাচ্ছে, যা অতীতে আগ্রাসনের জন্য শক্তিশালী কেন্দ্রে পরিণত হয়ে উঠেছিল।’

    কাকতালীয়ভাবে নয়, মেয়ারশাইমার সম্প্রতি পরামর্শ দিয়েছেন—সাবেক সোভিয়েত দেশগুলোতে স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী চাপ বর্তমান যুদ্ধের জন্য দায়ী। অথচ শীতল যুদ্ধ প্রকৃতপক্ষে স্থিতিশীলতার নিশ্চয়তা প্রদান করেছিল।’

    ক্ষণিকের জন্য হলেও ৯/১১-পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নতুন হুমকির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, যা ২১ শতকের জন্য নতুন মার্কিন গ্র্যান্ড স্ট্র্যাটেজি তৈরি করার আবশ্যকতাকে তুলে ধরে। ২০০২ সালে স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ঘোষণা করেছিলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দুষ্টের টার্গেটের মুখোমুখি, কাজেই বিশ্বে শান্তি বজায় রাখার স্বার্থে হুমকির বিপরীতে সশস্ত্র হওয়ার বিকল্প নেই।’ যদিও অক্ষশক্তি ও তার ‘সন্ত্রাসী মিত্ররা’ আমেরিকার মনোযোগ ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট ভয় জাগিয়ে তুলতে পারেনি, যতটা শীতল যুদ্ধের সময় কমিউনিস্টরা পেরেছিল। তবে এটা সত্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে দীর্ঘ সহিংস দশক ধরে থেকে যেতে বাধ্য হয়েছে; কেননা, সেখানকার হুমকিগুলোকে অস্তিত্বের চেয়ে বেশি স্থানীয় বলে মনে হয়েছে।

    পুতিনের রাশিয়া আজ বিশ্বব্যাপী শীতল যুদ্ধের সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তনকে সামনে আনছে। এটি এমন এক নতুন সংগ্রাম, যা ‘মন্দের বিরুদ্ধে ভালোকে সমর্থন করে’। কাজেই প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কথার সূত্র ধরে খুঁজে দেখা উচিত হবে যে, একুশ শতকের শীতল যুদ্ধ মার্কিনদের জন্য আসলে কেমন হতে পারে। পৌরাণিক কাহিনি ও স্মৃতি হাতড়ালে শীতল যুদ্ধকে এই সময়ের চেয়ে বেশি সুন্দর সময় বলে মনে হতে পারে। মনে রাখতে হবে, শীতল যুদ্ধকালে ঐক্যবদ্ধ মার্কিনরা একটি মোটামুটি স্থিতিশীল আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার নেতৃত্ব দিয়েছিল। যদিও সেই দশকগুলো অনেক বেশি সহিংস, দেশে-বিদেশে অনেক বেশি বিতর্কিত ছিল।

    ওয়াশিংটনের অনেকেই নতুন শীতল যুদ্ধে ফিরে যাওয়ার খবরে সত্যিই খুশি হতে পারেন। আবার কেউ কেউ সমালোচনা করলেও তাতে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। তবে এক্ষেত্রে নীতিনির্ধারকদের উচিত হবে জাতিকে দশক-দশক তথা দীর্ঘ সংঘাতের দিকে ঠেলে দেওয়ার আগে দুবার চিন্তা করা, যাতে করে জনগণ ইতিহাসের সমালোচনামূলক পাঠের চেয়ে এমন কোনো কল্পিত অতীতের ওপর বেশি গুরুত্ব না দেয়, যা শুধু বিভ্রান্তিই ছড়াবে।

    লেখক: স্যান দিয়েগো স্টেট ইউনিভার্সিটির মডার্ন ইউএস মিলিটারি হিস্ট্রির অধ্যাপক ও ইউএসএস মিডওয়ে চেয়ার

    এশিয়া টাইমস থেকে ভাষান্তর: সুমৃৎ খান সুজন
    Array
    We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
    আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
    এই বিভাগের আরও খবর
     
    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ

    October 2022
    M T W T F S S
     12
    3456789
    10111213141516
    17181920212223
    24252627282930
    31