গোয়ালন্দ প্রতিনিধি : ৮ বছর আগে এক মর্মান্তিক দূর্ঘটনায় ডান হাত কাটা গেছে ফেরদৌসীর। তবে এ প্রতিবন্ধকতা থামাতে পারেনি তার অদম্য ইচ্ছা শক্তিকে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা পেছনে ফেলেই এগিয়ে যাচ্ছে এ অদম্য কিশোরী। একটি মাত্র সচল হাত দিয়েই লিখে চালিয়ে যাচ্ছে। বাম হাত দিয়ে লিখেই এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ফেরদৌসী।
ফেরদৌসী আক্তার রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার পশ্চিম উজানচর মৃধাডাংগা গ্রামের দরিদ্র ফারুক মোল্লার সন্তান।
স্থানীয়রা জানান, ফেরদৌসী আক্তার গোয়ালন্দ প্রপার হাইস্কুলের মানবিক বিভাগের ছাত্রী। এ বছর তিনি চলমান এসএসসি পরিক্ষায় গোয়ালন্দ নাজির উদ্দিন সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে অংশ নিচ্ছেন। তার একটি দূর্ঘটনায় ডান হাত না থাকায় তিনি বাম হাত দিয়ে অতি কষ্টে লিখে এসএসসি পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন।
আলাপকালে ফেরদৌসী আক্তার বলেন, তার বাবা তাদের বাড়ির সামনে একটি ছোট্ট মুদি দোকান করেন। তারপরও তাদের তিনটি ভাইবোনকে পরিবার থেকে পড়ালেখা করাচ্ছেন। ২০১৪ সালে পাওয়ার ট্রিলারের ফিতার মধ্যে তার ডান হাত আটকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ ছাড়া গত কয়েক বছর ধরে তিনি ডায়াবেটিকস এ আক্রান্ত। নিয়মিত ইনসুলিন নিতে হয়।
তিনি বলেন, আমাকে নিয়ে বাবা সব সময় দুঃচিন্তায় থাকেন। ১৩ বছর আগে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে আমার মা মারা গেছেন। তখন তিনি খুব ছোট। তখন থেকে বয়স্ক দাদী আমাকেসহ আমাদের সংসারের জন্য হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে চলেছেন। তবুও আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমার স্বপ্ন একজন আদর্শ শিক্ষক হওয়ায়। সবার কাছে দোয়া চাই। আল্লাহ যেন আমাকে সুস্থ রাখেন। আমি যেন লেখাপড়া শেষ করে সবার মুখ উজ্জ্বল করতে পারি।
ফেরদৌসীর দাদী বলেন, মা মরা মেয়েটার একটা হাত না থাকায় ওর অনেক কষ্ট হয়। তবে লেখাপড়ায় খুব আগ্রহ তার। আমরাও তাকে সাহস দিয়ে যাচ্ছি। ভালো ফলাফল করে সে যেন শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন-পূরণ করতে পারে।
গোয়ালন্দ প্রপার হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, ফেরদৌসীর একটি হাত না থাকলেও পড়াশোনায় দমে যায়নি সে। অনেক সংগ্রামী ও মেধাবী একটি মেয়ে। আশা করছি সে ভালোভাবে এসএসসি পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হবে। আমরা স্কুল থেকে তার জন্য বিগত ৫ বছর সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে গেছি। তার উচ্চ শিক্ষা গ্রহনসহ স্বপ্ন পূরনে আগামীতে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। ভবিষ্যতে সে ভালো কিছু করবে।
Array