অনলাইন ডেস্কঃ
বিএনপির চলমান কর্মসূচি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কোনো আন্দোলন নয় বলে মনে করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সন্ত্রাস, নাশকতা চালিয়ে পরিকল্পিতভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করতে দলটি মাঠে নেমেছে বলে অভিযোগ করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
এ পরিস্থিতিতে বিএনপির সরকার বিরোধী যে কোনো কর্মসূচি প্রতিহত করতে ক্ষমতাসীনরা আরও কঠোর অবস্থানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে৷ ইতোমধ্যে সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের বিভিন্ন বক্তব্য থেকেও এটা স্পষ্ট হচ্ছে৷
বিশেষ করে রাজধানীর হাজারীবাগের ঘটনার পর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। গত ২৬ সেপ্টেম্বর হাজারীবাগে বিএনপির কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে আওয়ামী লীগের কয়েকজন কর্মী গুরুতর আহত হন৷ আহতদের একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
হাজারীবাগের ঘটনায় আহত ও পঙ্গু হাসপাতলে চিকিৎসাধীন এসব কর্মীর খোঁজখবর নিতে শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল সেখানে যান। প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাড. জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাসিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম।
এদিকে বিএনপি তাদের চলমান আন্দোলনকে সরকার পতনের আন্দোলন বলে ঘোষণা দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন বিএনপির নেতারা৷ তবে তাদের এ আন্দোলনকে গণতান্ত্রিক কোনো আন্দোলন বা কর্মসূচি নয় বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা৷
তারা বলেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, নাশকতা চালিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল ও বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তৈরিই বিএনপির উদ্দেশ্য। চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের এ উদ্দেশ্যেই ইতোমধ্যে বিএনপি মাঠে নামিয়েছে৷ এ অবস্থায় পরিস্থিতি প্রতিহত করতে সরকার ও আওয়ামী লীগকে আরও কঠোর অবস্থানে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই৷ বিএনপির এ ধরনের তৎপরতা দমনে আগামীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী আরও কঠোর পদক্ষেপ নেবে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও মাঠে কঠোর অবস্থান নেবে বলে জানান তারা৷
গত ২৮ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনে দলের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বিএনপির প্রতি ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেন৷ বিএনপি নেতারা জাতীয় পতাকা বাধা আরও বড় করার যে হুমকি দিয়েছেন, তারও তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা৷ বিএনপির এসব তৎপরতা এখনই প্রতিহত করতে মাঠে নামার দাবি জানান ক্ষমতাসীন দলের কোনো কোনো নেতা।
ওই আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বিএনপির উদ্দেশ্যে বলেন, এখনো আমরা রাস্তায় নামি নাই, রাস্তায় নামলে দেখবেন। পুলিশের ওপর, আমাদের কর্মীদের ওপর, সাংবাদিকদের ওপর হামলা করছেন। কী পেয়েছেন? আমরা মুক্তিযু্দ্ধের দল, এই রাজাকারদের আমরা রাজপথে হাঁটতে দিতে পারি না।
একই আলোচনা সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, লাঠির মাথায় জাতীয় পতাকা বাধা, আবার বলে লাঠি আরও বড় হবে। কত বড় আস্ফালন! এর জবাব আমরা দেব। যদি জাতীয় পতাকার সঙ্গে লাঠি নিয়ে রাস্তায় নামেন, আস্ফালন দেখান, জবাব আছে। আমি পরিষ্কার করে বলছি লাঠি নিয়ে খেলা, আগুন নিয়ে খেলা চলবে না।
এর পরেরদিন ২৯ সেপ্টেম্বর এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, বিএনপির আন্দোলনের হাঁকডাকে আওয়ামী লীগ ভীত সে রকম উদ্ভট চিন্তা কেউ করে না। আসেন, মাঠে আসেন। লাঠি নিয়ে আসলে খবর আছে। জাতীয় পতাকার সঙ্গে লাঠি, এটা আমরা মেনে নেবে না। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননা আমরা মেনে নেব না। আওয়ামী লীগ সতর্ক অবস্থায় আছে, সক্রিয় আছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, এটাকে কোনোভাবেই আন্দোলন বলা যাবে না। সন্ত্রাসী কায়দায় সন্ত্রাসী হামলা করছে বিএনপি। হাজারীবাগে পুলিশ, আওয়ামী লীগের কর্মী, সাংবাদিকদের ওপর পর্যন্ত তারা সন্ত্রাসী হামলা করেছে। আমাদের দলের তিন কর্মীকে তারা মারাত্মকভাবে আহত করেছে। তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, একজনের অবস্থা সংকটাপন্ন, মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। বিএনপি তাদের অতীতের চেনামুখ সন্ত্রাসীদের মাঠে নামিয়েছে, সারা দেশ থেকে ঢাকায় এনেছে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, নাশকতা চালিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করা, বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করাই তাদের উদ্দেশ্য। এ অবস্থা চালাতে থাকলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কঠোর ব্যবস্থা নেবে। আমরা আওয়ামী লীগ, সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণকে নিয়ে মাঠে থাকব এই সন্ত্রাসীদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে।
আজকালের বার্তা/ এফ.জে ওমর
Array