গাজীপুর প্রতিনিধিঃ বেলায়েত শেখ ৫৫ বছর বয়েসে সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি চান্স পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। বেলায়েত শেখের জন্ম ১৯৬৮ সালে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায়। তিনি দুই ছেলে ও এক মেয়ের বাবা। বড় ছেলে বিয়ে করে ব্যবসা করছেন। ছোট ছেলে শ্রীপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন। একমাত্র মেয়েকে গাজীপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে স্নাতক প্রথম বর্ষে পড়ার সময় বিয়ে দেন। লেখাপড়ার ইচ্ছে থাকা সত্যেও তার আর হয়ে উঠেনি। অভাব অনটন আর সংসারের হাল ধরার কারণে লেখাপড়া হয়ে উঠেনি। কিন্তু তার ইচ্ছে ছিলো তিনি সাংবাদিকতা বিভাগে বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া করবেন। ৫৫ বছর বয়সে টানা বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে তিনি ভাইরাল হয়েছিলেন। সবকটিতে ব্যর্থ হওয়ার পর রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন জ্ঞান পিপাসু ও অদম্য ইচ্ছাশক্তির অধিকারী বেলায়েত শেখ। তিনি বর্তমানে দৈনিক করতোয়া শ্রীপুর প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ২টার দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ফেসবুক আইডি থেকে একটি স্ট্যাটাস দেন বেলায়েত শেখ। সেখানে লিখেন আলহামদুলিল্লাহ, রাজশাহী বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি পরীক্ষায় পাস করেছি। মায়ের অনুমতি পেলেই ভর্তি হবো, ইনশাআল্লাহ।
বেলায়েত শেখ জানান, তিনি ১৯৮৩ সালে তিনি এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেনন, তখন তার বাবা গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় তাকে সংসারের হাল ধরতে হয়।অভাবের কারণে তিনি এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারেনি। ৫০ বছর বয়সে ২০১৭ সালে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে আবার লেখাপড়া শুরু করেন। ২০১৯ সালে রাজধানীর বাসাবোর দারুল ইসলাম আলিম মাদ্রাসা থেকে (দাখিল) পাস করেন। পরে ২০২১ সালে রাজধানীর রামপুরার মহানগর কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। একই বছর তার ছেলে এসএসসি পাস করে। দাখিলে জিপিএ ৪.৪৩ এবং এইচএসসিতে জিপিএ ৪.৫৮ পান তিনি। উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হওয়ার পর ৫৫ বছর বয়সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি শুরু করেন তিনি।
তিনি আরো জানান, গত ২৬ জুলাই রাবির ‘এ’ ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। রাবির ‘এ’ ইউনিটের গ্রুপ-১ এ পরীক্ষা দেন বেলায়েত। ২ আগস্ট রাতে রাবি ফলাফল প্রকাশিত হয়। ‘এ’ ইউনিটে উত্তীর্ণ হতে পারেননি বেলায়েত শেখ। এর আগে গত ১১ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিটে পরীক্ষা দেন তিনি। তবে সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি। এছাড়াও গত ২২ আগস্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ডি’ ইউনিটের পরীক্ষায় অংশ নিয়েও তিনি পাশ করতে পারেননি এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েও ভর্তির সুযোগ পাননি বেলায়েত। পরবর্তীতে রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেন তিনি। অবশেষে তার দীর্ঘদিনের আশা পূরণ হলো।
Array