• আজকের পত্রিকা
  • ই-পেপার
  • আর্কাইভ
  • কনভার্টার
  • অ্যাপস
  • ইডেনের ‘ডন’ রিভা 

     ajkalerbarta 
    26th Aug 2022 6:33 am  |  অনলাইন সংস্করণ

    বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য সম্প্রতি আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে রয়েছে রাজধানীর ইডেন সরকারি মহিলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগ। বিশেষ করে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভাকে নিয়ে চলছে তুমুল বিতর্ক। তিনি রয়েছেন সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

    তবে এতে যেন তাঁর কিছুই যায় আসে না। গত শুক্রবার ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় ক্ষমা চাওয়ার ঠিক চার দিনের মাথায় গত মঙ্গলবার রিভার বিরুদ্ধে দুই ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ভাইরাল করার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে।

    অন্যদিকে, এসব ঘটনার পরও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ হাত গুটিয়ে আছে। রিভার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা, এত বড় ঘটনার পর তাঁকে নূ্যনতম কারণ দর্শানোর নোটিশ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। এ ঘটনা ছাড়াও অতীতে অনেক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকলেও কোনো ধরনের ব্যবস্থা না নেওয়ায় রিভা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বলে অনেকেই মনে করেন।

    জানা যায়, তামান্না জেসমিন রিভা ইডেন কলেজের মার্কেটিং বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। এক যুগ ধরে তিনি ইডেনের ছাত্রীনিবাসে থাকেন। এখন থাকেন কলেজের বঙ্গমাতা ছাত্রীনিবাসের ১১০৭ নম্বর কক্ষে। এ বছরের ১৩ মে তিনি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পান। সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান রাজিয়া সুলতানা। তাঁদের দু’জনের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ রয়েছে এবং তাঁরা কলেজে ছাত্রলীগের পৃথক দুটি পক্ষ নিয়ন্ত্রণ করেন।

    ইডেন কলেজে ছাত্রলীগ নেত্রীদের সিট ব্যবসা বহু পুরোনো। নিয়ম অনুযায়ী প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা ছাত্রীনিবাসে সিট পান না। তবে কম খরচ এবং নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধার কারণে শিক্ষার্থীরা ছাত্রীনিবাসে উঠতে চান। ছাত্রলীগের নেত্রীরাই প্রথম বর্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের ছাত্রীনিবাসে ওঠানো শুরু করেন। এ জন্য দিতে হয় এককালীন ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। তবে সিট বাণিজ্যে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন তামান্না জেসমিন রিভা।

    নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের একাধিক নেত্রী জানান, রিভা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের অনুসারী। এ ছাড়া ইডেন কলেজের সার্বিক দায়িত্বে থাকা সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেনজির হোসেন নিশির কাছের হওয়ায় তাঁর ছত্রছায়ায় রিভা এসব বিতর্কিত কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।

    অতীতে দেখা গেছে, শুধু ছাত্রলীগই নয়, তাঁর কর্মকাণ্ডের বিষয়ে ইডেন কলেজ কর্তৃপক্ষও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদেরই হল থেকে বের করে দেয় হল প্রশাসন।

    নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে কলেজের কয়েকজন ছাত্রী বলেন, এই কমিটি হওয়ার পর ছাত্রলীগের মিছিল-মিটিংয়ে শিক্ষার্থীদের জোর করে নিয়ে যান রিভা। অসুস্থতা কিংবা ঋতুস্রাবের কথা বললেও ছাড় দেন না তিনি। উল্টো বলেন,’আইসিইউতে থাকলেও প্রোগ্রামে যেতে হবে।’ এসব কারণে অনেকে প্রোগ্রামে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিছুদিন আগে একটি প্রোগ্রামে যাওয়ার পর এক শিক্ষার্থী হিট স্ট্রোক করে তিন ঘণ্টা বেহুশ ছিলেন।

    সম্প্রতি রিভার একটি অডিও ভাইরাল হয়। এতে শোনা যায়, কলেজের রাজিয়া বেগম হলের ২০২ নম্বর কক্ষে হলের চার ছাত্রীকে গালাগাল এবং নানা ধরনের হুমকি দিচ্ছেন তিনি। অডিওতে রিভা বলেন, ‘আমি যদি একটা সিট না দেই, ২০২ থেকে তোদের কোন বাপ সিট দিবে? ম্যাডামরা দিবে, ক্ষমতা আছে ম্যাডামদের। ম্যাডামদের ক্ষমতা আছে আমাদের রুম থেকে একটা মেয়েকে রুম থেকে বের করার। ইডেন কলেজের প্রিন্সিপালেরও ক্ষমতা নেই এই রুম থেকে একটাকে বের করার।’ হুমকি দেওয়ার পরের দিনই চারজনের মধ্যে দুই ছাত্রী হল ছাড়েন।

    এ ঘটনায় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হলে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে ক্ষমা চান রিভা। তবে ঘটনার চার দিন পেরোতে না পেরোতেই আবারও সেই ছাত্রীদের মধ্যে বাকি দু’জনকে তাঁর কথা কে রেকর্ড করেছে, তা জানতে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা হলের ১১০৭ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে সকাল ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত মানসিক নির্যাতন করেন রিভা। এ সময় তিনি ওই দুই ছাত্রীকে কলেজ ছাত্রলীগের সহসভাপতি সুমনা মীমের নামে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করেন বলেও জানান নির্যাতনের শিকার এক ছাত্রী। ওই ছাত্রী আরও জানান, তাঁদের বিবস্ত্র করে ভিডিও করে তা ভাইরাল করারও হুমকি দেন রিভা।

    সন্ধ্যায় রাজিয়া হলের প্রাধ্যক্ষ নার্গিস রুমা তাঁদের উদ্ধার করেন। এরপর তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে গভীর রাতেই ভুক্তভোগীদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু রিভার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো ভুক্তভোগীদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিও ধারণ করে গণমাধ্যমে দেওয়ার অভিযোগে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন রাজিয়া হল প্রাধ্যক্ষ।

    নোটিশে বলা হয়, ‘গত মঙ্গলবার আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় হোস্টেলের তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে তোমার আকস্মিক প্রবেশ এবং অফিসিয়াল কথাবার্তা রেকর্ড করে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার করেছ, যেটা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের লঙ্ঘন।’ এতে আরও বলা হয়, ‘এই ঘটনার প্রেক্ষিতে তোমার বিরুদ্ধে কেন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, এ ব্যাপারে নোটিশ প্রাপ্তির পর আগামী বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার মধ্যে হোস্টেল কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিতভাবে উত্তর দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।’

    এ বিষয়ে রাজিয়া হলের প্রাধ্যক্ষ নার্গিস রুমাকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও প্রত্যেকবার তিনি ফোন কেটে দেন। তাঁকে মেসেজ পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।

    ইডেন কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ফেরদৌসী বেগম বলেন, ও রকম কোনো সমস্যা হয়নি। আমাদের হল কর্তৃপক্ষ দেখছে কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা। আমাদের কলেজের পরিবেশ অনেক ভালো আছে। অডিও ক্লিপ যেটা আসছিল, সেটার জন্য ও (রিভা) সরি বলেছে। এটা তো আপনারা দেখেছেন। মঙ্গলবারের নির্যাতনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের হলে কোনো নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি। এ জিনিসটা নেই। তবে রিভার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলতে পরামর্শ দিয়ে ফোন কেটে দেন।

    শিক্ষার্থী নির্যাতনের বিষয়ে ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য বলেন, নির্যাতনের ঘটনা সত্য নয়। কয়েকজন শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হল কর্তৃপক্ষ অবশ্যই হলের মেয়েদের আচরণ নিয়ে বকাঝকা করতে পারে। সেটা ভিডিও করে যদি কেউ মিডিয়ায় দেয়, তাহলে অবশ্যই তাকে কারণ দর্শানো নোটিশ দিতে পারে। তবে কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি রিভার হুমকি-ধমকি দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যান।

    শুধু শিক্ষার্থী নির্যাতন বা হলের সিট বাণিজ্য নয়, রিভার বিরুদ্ধে হল ও কলেজ ক্যান্টিন, ওয়াইফাই প্রোভাইডার এবং কলেজ-সংলগ্ন ফুটপাতের দোকানগুলোতে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। সূত্র জানায়, রিভার নেতৃত্বে শুধু আগস্ট মাসেই ওয়াইফাই প্রোভাইডার, কলেজ ও হল ক্যান্টিন এবং ফুটপাতের দোকান থেকে ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। চাঁদার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে কলেজ ছাত্রলীগের নেতাদের মধ্যে তীব্র অন্তর্কোন্দল রয়েছে।

    এ ছাড়া কলেজের একটি ক্যান্টিন থেকে রিভার অনুসারীরা সম্প্রতি ১ লাখ ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে না চাইলে ক্যান্টিন বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয় তারা। পরে সেই ক্যান্টিন মালিক তাঁর স্ত্রীর চিকিৎসার টাকা থেকে বড় অঙ্কের একটা অংশ তাদের হাতে তুলে দেন। এ-সংক্রান্ত একটি ভিডিও সমকালের হাতে এসেছে। তবে ভুক্তভোগীর নিরাপত্তার স্বার্থে তাঁর নাম প্রকাশ করা হলো না।

    এসব বিষয়ে রিভার বক্তব্য জানতে তাঁকে ফোনে এবং হোয়াটসঅ্যাপে একাধিকবার কল দেওয়া হয়। প্রতিবারই তিনি কল কেটে দেন। এ ছাড়া তাঁকে মেসেজ পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।

    কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় বলেন, ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করে। আমরা কখনোই চাইব না এ ধরনের কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটুক। এ বিষয়ে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের খোঁজ নিতে এবং তদন্ত করতে বলেছি। তদন্তে যে দোষী প্রমাণিত হবে, তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

    সুত্র: দৈনিক সমকাল

    Array
    We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
    আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ

    August 2022
    M T W T F S S
    1234567
    891011121314
    15161718192021
    22232425262728
    293031