আজকালের বার্তা প্রতিবেদন : বাঙালি জাতির শোকের দিন আজ। আজ ইতিহাসের এক কলঙ্কময় দিনও। ১৯৭৫ সালে আজকের দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়। যাঁর অসীম সাহসী নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে, সেই মানুষটি ও তাঁর পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যকে নৃশংসভাবে হত্যা করে একদল বিপথগামী সেনা সদস্য।
১৫ই আগস্ট কালরাতে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক বাড়িটিতে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালায় খুনিরা। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশ নামে নতুন স্বাধীন রাষ্ট্রটির বহু সম্ভাবনার অকালমৃত্যু ঘটায় তারা। একই সঙ্গে এই দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীত ধারায় নিয়ে যায়। যে ক্ষত এখনো বইছে দেশ।
নানা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে আজ রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতীয় শোক দিবস পালন করা হচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন জাতির পিতাকে হত্যার দিনটিতে তাঁকে যথাযথ মর্যাদায় স্মরণ করবে। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বলেন, বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠাই ছিল তাঁর স্বপ্ন। এই লক্ষ্যে স্বাধীনতার এক বছরের মাথায় প্রণয়ন করেন একটি গণমুখী সংবিধান। বঙ্গবন্ধু শুধু একটি দেশই উপহার দেননি; তিনি সদ্য স্বাধীন একটি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামো কেমন হবে, তারও একটি যুগোপযোগী রূপরেখা প্রণয়ন করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাণীতে বলেন, ‘ঘাতকচক্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করলেও তাঁর স্বপ্ন ও আদর্শের মৃত্যু ঘটাতে পারেনি; কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এবং গণতন্ত্রবিরোধী চক্র এখনো নানাভাবে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। এই অপশক্তির যেকোনো অপতৎপরতা-ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করে দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ও গণতন্ত্র রক্ষার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকতে আমি সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। ’
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ভোরে সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্য ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে হামলা চালায়। ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করে থামেনি, তারা বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামালকেও হত্যা করে। একই সময়ে পৃথক দুটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে খুনিরা বঙ্গবন্ধুর অনুজ শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত এবং তাঁর ছেলে আরিফ ও সুকান্তবাবু, মেয়ে বেবী, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি এবং আবদুল নাঈম খান রিন্টুকে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুকে বাঁচাতে ছুটে আসা তাঁর সামরিক সচিব কর্নেল জামিলকেও হত্যা করে বিপথগামী সেনা সদস্যরা। তবে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে রক্ষা পান।
নৃশংস এই হত্যাকাণ্ড বিশ্বকে হতভম্ব করে দেয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জার্মানির নোবেলজয়ী নেতা উইলি ব্রানডিট বলেন, ‘মুজিবকে হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যে বাঙালি শেখ মুজিবকে হত্যা করতে পারে তারা যেকোনো জঘন্য কাজ করতে পারে। ’
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ও বিশিষ্ট সাহিত্যিক নীরদ সি চৌধুরী বলেন, ‘বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি বিশ্বের মানুষের কাছে নিজেদের আত্মঘাতী চরিত্রই তুলে ধরেছে। ’
দ্য টাইমস অব লন্ডনের ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট সংখ্যায় উল্লেখ করা হয় ‘সব কিছু সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুকে সব সময় স্মরণ করা হবে। কারণ তাঁকে ছাড়া বাংলাদেশের বাস্তব কোনো অস্তিত্ব নেই। ’ একই দিন লন্ডন থেকে প্রকাশিত ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় বলা হয়, ‘বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ শেখ মুজিবের জঘন্য হত্যাকাণ্ডকে অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করবে। ’
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতায় আসা স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক আহমেদ বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের হাত থেকে রক্ষা করতে ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ‘ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স’ জারি করেন। পরে জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সকে আইন হিসেবে অনুমোদন করেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ২১ বছর আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসতে পারেনি। পরে ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এবং খুনিদের দায়মুক্তি দিয়ে পাস করা সেই আইন বাতিল করে। পরে ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আবার সরকার গঠন করে আইনি প্রক্রিয়ায় বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার সম্পন্ন ও রায় কার্যকর করা হয়। যদিও কয়েকজন খুনি এখনো বিদেশে আছে। তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকরের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে সরকার।
জাতীয় শোক দিবসে আ. লীগের কর্মসূচি : আজ সূর্য উদয়ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে সংগঠনের সব স্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল ৬টায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত ধানমণ্ডি বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হবে। সকাল ৮টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ই আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, মাজার জিয়ারত, ফাতিহা পাঠ, মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
দুপুর ১২টায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, ফাতিহা পাঠ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল পাঠ করা হবে। ওই কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল, গোপালগঞ্জ জেলা ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত থাকবেন। বাদ জোহর কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। একইভাবে মন্দির, প্যাগোডা, গির্জা, উপাসনালয়ে দেশব্যাপী বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। ১৬ আগস্ট বিকেল সাড়ে ৪টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন।
এ ছাড়া জাতীয় শোক দিবসে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। পত্রিকাগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে, বিশেষ আয়োজন হাতে নিয়েছে দেশের বিভিন্ন টেলিভিশন ও বেতার।

 
 
                            
                        
                                                
                                                
                                                
                                                
                                                
                                                
                                                
                                                
                                                
                                                
                                                
                                                
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            