আবু নাসের খাঁন (পলাশ):
স্কুল শব্দটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। যেখানে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যপুস্তুক নিয়ে আসবে, শিক্ষকরা পড়াবে। কিন্তু ব্যতিক্রম স্কুলও রয়েছে, যে স্কুলে শিক্ষক, শিক্ষার্থী সবই আছে তবে নেই কোনো পড়ার চাপ। ছোটো বাচ্চা থেকে কর্মজীবি সব বয়সের শিক্ষার্থীর দেখা মিলবে এই স্কুলে। এখানে একঘেয়ে সিলেবাসের বাহিরে সৃজনশীলতার চর্চা হয়। স্কুলটি হলো কুমিল্লা নগর উদ্যানে অবস্থিত সিটি কর্পোরেশন অংকনশালা ও শিল্প চর্চা কেন্দ্র।
গতানুগতিক শিক্ষা ব্যবস্থার বাহিরে এই স্কুলে শিক্ষার্থীদের শেখানো হয় চিত্র শিল্পের নানা কলা-কৌশল। শিশু থেকে শুরু করে নানা বয়সী লোক এই প্রতিষ্ঠানে রপ্ত করছেন ছবি আঁকার নানা কলা-কৌশল। এখানে বাচ্চাদের সৃজনশীল কর্মে উদ্ভূত করতে শেখানো হয় ছবি আঁকা।
প্রতিষ্ঠানটির সাথে সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৯ সালে ১৬ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু করা এই স্কুলটির শিক্ষার্থী এখন সাত শতাধিক। সপ্তাহের প্রতিদিন দুই শিফটে স্কুলটিতে ক্লাস হয়, সাপ্তাহিক বন্ধের দিনে হয় চারটি শিফট। মাত্র ১০০ টাকা ভর্তি ফি দিয়ে যে কেউ এই স্কুলটিতে ভর্তি হতে পারে, মাসিক ফিও মাত্র ৭০ থেকে ১২০ টাকা। ফি কম হওয়ায় স্কুলটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বেশি বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা। শুধু কুমিল্লা নগরী নয় আশেপাশের বিভিন্ন উপজেলা হতেও বাচ্চাদের নিয়ে স্কুলটিতে অভিভাবকরা আসছেন।
স্কুলটিতে ছবি আঁকা শিখতে আসে বাচ্চা থেকে তরুণ সব বয়সের ছবিপ্রেমী। অর্পা রাণী গুহ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ছবি আঁকতে ভালো লাগে, তাই এখানে এসেছি। এই স্কুলে এসে ছবি আঁকার নানা কলা-কৌশল শিখতে পারছি। বাবু নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি পড়াশোনা শেষে এখন জব করছি। ছোট বেলা থেকেই ছবি আঁকার প্রতি ভালো লাগা কাজ করতো। সময়-সুযোগের অভাবে সে সময়ে শিখতে পারি নাই। তাই ছুটির দিন গুলোতে এখানে আসি।
বাচ্চাদের নিয়ে স্কুলটিতে আসা অভিভাবকদের একজন জানালেন, বাচ্চাদের সৃজনশীল কর্মে আগ্রহী করে গড়ে তুলার জন্যই এখানে নিয়ে আসা। স্কুলটিতে এসে বাচ্চাদের যেমন সময় কাটছে তেমনিভাবে তারা নতুন কিছু শিখতে পারছে।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলটিতে মোট শিক্ষক রয়েছে ৫ জন। এই ব্যতিক্রমী স্কুলটির শিক্ষক জিতু বলের, আমরা এখানে ছবি আঁকার প্রাথমিক জ্ঞান হতে শুরু করে ছবি আঁকার নানা কলা কৌশল শেখাই। ছবি আঁকার প্রতি ভালোবাসার জায়গা হতেই এই পেশায় আসা। আর বাচ্চারা ছবি আঁকায় আগ্রহী, ওরা খুব আগ্রহ সহ শিখতেছে। এটা দেখে নিজেদেরও ভালো লাগে।
সিটি কর্পোরেশন অংকনশালা ও শিল্পচর্চা কেন্দ্রের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ শাহীন জানান, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশেনর পৃষ্ঠপোষকতায় স্কুলটি চলছে। স্কুলটি নিয়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহের কমতি নেই। পর্যাপ্ত সহায়তা পেলে সিটি কর্পোরেশনের অন্য এলাকাগুলোতে এর ব্যপ্তি বাড়ানোর ইচ্ছা রয়েছে। এছাড়াও ভবিষ্যতে শিল্পের বিকাশে প্রতিষ্ঠানটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ শিল্পচর্চা কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনাও রয়েছে।
Array