‘হাওয়া’সিনেমা দেখলাম দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতে। ‘পরাণ’সিনেমাও দেখেছি আগেই। ছবি দুটো কেমন হয়েছে সেটা আমার বলা মুশকিল, কারণ বাংলাদেশের সিনেমার অংশ আমি। নিজের পরিবারের সনদ যেমন নিজে দেওয়া যায় না তেমনি আমার পক্ষে আমাদের সিনেমা কেমন তা বলা সম্ভব না। তবে আমার কেমন অনুভূতি হয়েছে তাই শেয়ার করি।
সিনেমা দিয়ে আমার মিডিয়া যাত্রা। মুখিয়ে থাকতাম আমার বা আমাদের সিনেমা কবে হলভর্তি দর্শক পাবে, মাসের পর মাস চলবে। ২০০৬ সাল থেকে এই ২০২২ সাল অব্দি অপেক্ষাই করে গেলাম শুধু। এই আঠারো বছরে অবশ্যই ১৮টি বা তার বেশি ‘আমাদের’ সিনেমা ছিলো। যেসব সিনেমা মানুষ প্রাণভরে দেখে কিন্তু তাদের কাছে সিনেমাগুলো পৌঁছতে পারেনি। কিন্তু এতগুলো বছরে সিনেমা নামের যেসব গার্বেজ তৈরি হয়েছে সেসবের ভিড়ে আমাদের সিনেমাগুলো মুখ থুবড়ে পড়েছিলো। পড়তে বাধ্য করা হয়েছিলো।
সময় পাল্টেছে, প্রজন্ম পাল্টাচ্ছে, দর্শক আধুনিক হচ্ছে- দেখার জন্য মানুষের হাতের মুঠোয় পৃথিবী রয়েছে। তাই তারা গার্বেজ সিনেমার মূলে কষাঘাত করেছে, বর্জন করছে। আমাদের সিনেমার সুদিন শুরু হয়েছে। হাওয়া আর পরাণ-এর শোগুলোতে হলভর্তি দর্শক দেখে আনন্দে চোখ ভিজেছে আমার। তেমনি রাগে ফুঁসে উঠেছিলাম যখন যমুনা ব্লকবাস্টারে হাওয়ার শো শেষের তিন মিনিট আগেই এক্সিট গেইট খুলে গিয়েছিলো কিংবা সামনের সিটের দু’জনের মোবাইল স্ক্রিনের লাইট আমাকে ডিস্টার্ব করেছিলো।
একদম দুটো ভিন্ন ধাঁচের সিনেমার স্বাদ যে মানুষ ভিন্নভাবে নিচ্ছে সেটাই আমাকে দারুণ আশাবাদী করে তুলছে। এবার হয়তো মফস্বলের হলগুলোর ছারপোকায় জর্জরিত চেয়ারগুলোও নড়েচড়ে উঠবে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের নড়াচড়ায় হয়ে উঠতে পারে জেলায় জেলায় সিনেপ্লেক্সও!
এই দুই সিনেমা আমাদেরকে একজন চমৎকার শিল্পী উপহার দিয়েছে, তিনি শরীফুল রাজ। আমি আশা করছি রাজ রাজার মতোই রাজত্ব করবে। ‘হাওয়া’ সিনেমার নয়নতারা যেমন যাত্রা করেছে কূলহীন সমুদ্রে, বুকে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে- আমি তেমনি দেখছি আমাদের সিনেমাযাত্রা অস্কারের ঠিকানায়!
শুধু এ মহাযাত্রায় চানমাঝির মতো লোভীরা না থাকলেই হয়। অভিনন্দন মেজবাউর রহমান সুমন, অভিনন্দন রায়হান রাফি।
Array