প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,বস্তিবাসীর মধ্যে যারা গ্রামে ফিরে যাবেন সরকার তাদের জমিসহ ঘর করে দেবে। তাদের ঋণ দেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনে বিনামূল্যে ৬ মাসের খাবার দেওয়া হবে। যাতে এ সময়ের মধ্যে নিজে একটা কাজ করে চলতে পারেন। তিনি বলেন, যাদের ভিটামাটি আছে তাদেরও ঘর করে দেওয়া হবে, অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে। সেই ঘরে ফেরা কর্মসূচিটা আবার আমি ভালোভাবে চালু করব। বস্তিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে না থেকে নিজের গ্রামে ফিরে গেলে এ সুবিধাগুলো পাবেন।
মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নির্মিত ফ্ল্যাট এবং মিরপুরে বস্তিবাসীদের জন্য নির্মিত স্বল্প ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাট উদ্বোধন ও হস্তান্তর অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত মূল আনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। এদিন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আজিমপুর সরকারি কলোনি, মিরপুর ৬ নম্বর সেকশন, মালিবাগ এবং মতিঝিলে ২ হাজার ৪৭৪টি ফ্ল্যাট সংবলিত ৫টি আবাসন প্রকল্প এবং বস্তিবাসীদের জন্য মিরপুরে নির্মিত ৩০০টি ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাট উদ্বোধন ও হস্তান্তর করা হয়। এছাড়া, অনুষ্ঠানে মাদারীপুরে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের নির্মিত সমন্বিত অফিস ভবন ও উদ্বোধন করেন তিনি। উদ্বোধনের তালিকায় ছিল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আটতলার দুটি আবাসিক ভবন। এগুলো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষে দেশে গৃহহীনদের অন্তত একটি ঘর দেওয়ার বিষয়ে তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশ, এখানে প্রতিটি মানুষ সুন্দর ও উন্নত জীবন পাবেন। জাতির পিতা বেঁচে থাকলে দেশ স্বাধীন হওয়ার ১০ বছরের মধ্যেই মানুষ উন্নত জীবন পেত। প্রত্যেকটি গ্রাম এবং ওয়ার্ড-ইউনিয়ন পর্যন্ত উন্নত হতো। সে কাজটাই আমরা এখন করে যাচ্ছি,’ যোগ করেন তিনি।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কয়েকজন বস্তিবাসীর মাঝে ফ্ল্যাটের বরাদ্দপত্র হস্তান্তর করেন। প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার স্বাগত বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে প্রকল্পগুলোর ওপর ভিডিও চিত্র ও পরিবেশিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী ঢাকা শহরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন ব্যবস্থা মাত্র ৮ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশে উন্নীত করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। যে কারণে ঢাকার আজিমপুর, মতিঝিল, মিরপুর, মালিবাগ এলাকায় ৩২টি ভবনে ২ হাজার ৪৭৪টি ফ্ল্যাট নতুনভাবে সরকারি আবাসনে যোগ হলো। ফলে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন ব্যবস্থা ২৪ শতাংশে উন্নীত হলো।
আজিমপুর সরকারি কলোনিতে রয়েছে ১৭টি ২০ তলা ভবনে ১ হাজার ২৯২টি ফ্ল্যাট, মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনে ২৮৮টি ফ্ল্যাট, মালিবাগে চারটি ২০ তলা ভবনে ৪৫৬টি ফ্ল্যাট এবং মতিঝিলে পাঁচটি ২০ তলা ভবনে ৩৮০টি ফ্ল্যাট। প্রতিটি ১ হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট। ভবন এলাকায় মুক্ত বাতাস চলাচল নিশ্চিত করতে ক্রস ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বাথরুম ও টয়লেট আলাদা নির্মাণ করে সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাসহ অগ্নি দুর্ঘটনাকালে প্রতিটি ফ্ল্যাটের বারান্দায় গ্রিলে জরুরি নির্গমণ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রায় ৭০ ভাগ উন্মুক্ত স্থান সংবলিত সরকারি এ হাউজিং প্রকল্পগুলোতে খেলার মাঠ, সবুজায়ন, ওয়াটার বডি বা পুকুর, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা এবং স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের (এসটিপি) সংস্থান রাখা হয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি হিসাবে সোলার প্যানেল ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বৈদ্যুতিক ফিটিংস যন্ত্রপাতি লাগানো হয়েছে। প্রকল্পগুলো পরিবেশবান্ধব এবং সবুজ হিসাবে গড়ে উঠেছে।
অনুষ্ঠানে বস্তিবাসীদের মানবেতর জীবনের কথা তুলে ধরে তাদের আবাসন সমস্যা দূর করতে সরকারের উদ্যোগের বিষয়ে কথা বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আজকে অন্তত ৩শটির মধ্য থেকে তিনটা পরিবারের কাছে আমরা ফ্ল্যাট হস্তান্তর করতে যাচ্ছি এবং পর্যায়ক্রমিকভাবে আমরা এ ব্যবস্থাটা নেব। কিন্তু তাদের ভাড়া দিয়ে থাকতে হবে। যতদিন ঢাকায় থাকবে তারা ভাড়া দিয়ে থাকবে। বস্তির অস্বাভাবিক ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কথা তুলে ধরে তাদের জন্য ফ্ল্যাট করার উদ্দেশ্যও জানান প্রধানমন্ত্রী। বসবাসকারীরা (ফ্ল্যাটে) মাসে ভাড়া দিতে পারবেন, সপ্তাহে যারা কামাই করে ভাড়া দেন তারাও পারবেন বা প্রতিদিনের ভাড়া হিসাবে যদি কেউ নিতে চান সেভাবেও নিতে পারবেন। সেভাবে আমরা এই ফ্ল্যাটগুলো তৈরি করে দিচ্ছি যাতে একটা সুস্থ পরিবেশে সবাই থাকতে পারেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ‘ঘরে ফেরা’ কর্মসূচি নিয়েছিলাম। একজন বস্তিবাসী যদি নিজ গ্রামে ফিরে যায় তার যদি ভিটেমাটি থাকে সেখানে বিনা পয়সায় ঘরবাড়ি তৈরি করে দেওয়া, তাকে স্বল্প সুদে ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়ার পাশাপাশি ৬ মাসের খাবার বিনা পয়সায় দেওয়া এবং সে যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে তার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। এভাবে প্রায় ১৮ হাজার পরিবার নিজ গ্রামে ফিরে গিয়েছিল। সেভাবে আমরা তাদের উদ্বুদ্ধ করেছিলাম। বিভিন্ন সময় বস্তি পরিদর্শন করে বস্তিবাসীদের মানবেতর জীবন দেখার অভিজ্ঞতার কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
রাজধানীর মিরপুরে বস্তিবাসীদের জন্য ১৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বহুতল ভবনে ৫৩৩টি আধুনিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। বস্তির ঝুপড়ি ঘরের সমান বা তার চেয়েও কম ভাড়ায় এসব আধুনিক ফ্ল্যাটে থাকতে পারবেন বস্তিবাসী। এজন্য, প্রধানমন্ত্রী ২০১৭ সালের ২৬ অক্টোবর বস্তিবাসীদের জন্য ভাড়াভিত্তিক আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। সে অনুযায়ী, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে মিরপুর ১১নং সেকশনের বাউনিয়া বেড়িবাঁধ এলাকায় ছয় বিঘা জমির ওপর তাদের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ১৪ তলা বিশিষ্ট ৩টি ভবনে ভাড়াভিত্তিক ৩০০টি ফ্ল্যাটের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এখানে অন্য ২টি ভবনে আরও ২৩৩টি ফ্ল্যাটের নির্মাণ কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
প্রতিটি ভবনে রয়েছে কমিউনিটি হলো, দুটি লিফট ও প্রশস্ত সিঁড়ি, অগ্নিনির্বাপণ ও সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা, ৪০ কেভিএ জেনারেটর ও ২৫০ কেভিএ সাব-স্টেশন, প্রশস্ত ওয়াকওয়ে ও সৌন্দর্যবর্ধনের লাইটিংসহ আধুনিক সুবিধা।
প্রতিটি ৬২০ থেকে ৭১৯ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাটে রয়েছে দুটি করে বেডরুম, একটি বারান্দা, একটি ড্রয়িং রুম, বেসিন, রান্নাঘর ও দুটি বাথরুম। ফ্ল্যাটের দুই পাশে ফাঁকা জায়গা। ফ্ল্যাটগুলো টাইলস করা।
প্রতিটি ভবনের নিচতলা বরাদ্দপ্রাপ্তদের সাধারণ ব্যবহারের জন্য উম্মুক্ত রাখা হয়েছে। এ প্রকল্পে সবুজায়ন ও ছোট ছোট শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার জন্য ভবনের সামনে ফাঁকা জায়গা রাখা হয়েছে।
ক্রমহ্রাসমান কৃষি জমির কথা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রীই বহুতলবিশিষ্ট সমন্বিত সরকারি অফিস ভবন নির্মাণের ধারণা দেন। যাতে জেলা শহরগুলোতে একই ছাদের নিচে দ্রুততম সময়ে সরকারি সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। সে অনুযায়ী মাদারীপুরে আজকে উদ্বোধন হওয়া একটি ১০ তলা ভবন ছাড়াও গণপূর্ত অধিদপ্তর গোপালগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ জেলায় এরূপ সমন্বিত অফিস ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।
১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্প শুরু হওয়ার পর থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত (মুজিববর্ষের গৃহসহ) ৪ লাখ ৪২ হাজার ৬০৮টি ভূমিহীন-গৃহহীন-ছিন্নমূল-অসহায় পরিবারকে গৃহ প্রদান করা হয়েছে। আর ৯৬ সাল থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার এ পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ পরিবারের বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছে।
Array
 
 
                            
                        
                                                
                                                
                                                
                                                
                                                
                                                
                                                
                                                
                                                
                                                
                                                
                                                
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            
                                                
                                            